আজ ৩১ জুলাই জাতীয় দৈনিকসমূহে প্রকাশিত প্রধান প্রধান খবরের সংক্ষেপ

 

কালের কণ্ঠ: 'এখন আলোচনায় 'এক্সিট''

ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার এক বছর পূর্ণ করতে যাচ্ছে, আর এই সময়ে রাজনৈতিক মহলে তাদের বিদায় নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) বলছে, সরকারের 'মধুচন্দ্রিমা' শেষ হওয়ায় এ বছর রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ বাড়বে। দেশি-বিদেশি বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই সরকারের প্রতি প্রাথমিক সমর্থন এখন কমে এসেছে এবং দ্রুত একটি রাজনৈতিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় এসেছে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সতর্ক করে বলেছেন, এই সরকার যত বেশি সময় ক্ষমতায় থাকবে, সংকট তত বাড়বে। এমনকি সেনাবাহিনীও দ্রুত ক্ষমতা হস্তান্তরের পক্ষে মত দিয়েছে। 

সেমিনারে ২৬টি দেশের উদাহরণ টেনে বলা হয়েছে, স্বল্প সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনা সম্ভব। যদিও এই সরকার সংস্কার সংলাপ চালিয়েছিল, কিন্তু এর বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে। বিনিয়োগ, মূল্যস্ফীতি এবং জ্বালানি সংকটের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতেও কোনো উন্নতি হয়নি। বিশেষজ্ঞরা একমত যে, একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমেই দেশের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা সম্ভব। 

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহদীন মালিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাব্বীর আহমেদও একই মতামত দিয়েছেন, যেখানে সাব্বীর আহমেদ ড. ইউনূসের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাবনার কথা বলেছেন, তবে তার আগে সব পক্ষের স্বার্থ সংরক্ষণ এবং 'পতিত স্বৈরাচার' যাতে ফিরে না আসে, তা নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছেন। সব মিলিয়ে, এই মুহূর্তে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের বিদায় এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আয়োজন।


দেশ রূপান্তর: 'সংগঠিত হওয়ার চেষ্টায় আ.লীগ, তৎপর পুলিশ'

আগামী ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে দেশের রাজনীতিতে আবারও উত্তেজনা বাড়ছে। সরকারবিরোধী দলগুলো নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, যার প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগও সারাদেশে নিজেদের সংগঠিত করার চেষ্টা করছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আশঙ্কা করা হচ্ছে, আগস্ট মাসকে ঘিরে আওয়ামী লীগ এবং তাদের অঙ্গ সংগঠনগুলো চোরাগোপ্তা হামলা চালাতে পারে, বিশেষ করে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ব্যবহার করে নাশকতার সম্ভাবনা রয়েছে। 

এই আশঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সারাদেশে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। আবাসিক হোটেল, সড়কপথ, সীমান্ত এলাকা, বাস-লঞ্চ টার্মিনাল এবং বিমানবন্দরের চারপাশে বিশেষ তল্লাশি চালানো হচ্ছে। পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে নিরপরাধ কোনো ব্যক্তি হয়রানির শিকার না হয়, তবে আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, এদের অনেকেই প্রতিবেশী ভারতে আত্মগোপনে আছেন। 

পুলিশ আরও জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের নেতারা হঠাৎ করে মিছিল বের করে সাধারণ মানুষের ভিড়ে মিশে যেতে পারে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নৈরাজ্য ছড়ানোর চেষ্টা করতে পারে। গত বছরের আন্দোলনে ছাত্র ও সাধারণ মানুষদের ওপর ছাত্রলীগ এবং পুলিশের হামলা, গুলি ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। বর্তমান সরকার অবশ্য দাবি করছে যে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং ৫ই আগস্ট ঘিরে কোনো বড় হুমকি নেই, তবে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।


প্রথম আলো: 'মৌলিক সংস্কারের সব বিষয়ে মতৈক্য হয়নি'

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আজ দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার দ্বিতীয় পর্ব শেষ করতে চাইলেও, দুঃখজনকভাবে মৌলিক সংস্কারের সব প্রস্তাবে এখনও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এর ফলে 'জুলাই জাতীয় সনদ' আজ চূড়ান্ত হবে কিনা, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কমিশন ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দুই ধাপে আলোচনা করেছে। দ্বিতীয় পর্বে এখন পর্যন্ত ১৩টি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, যার মধ্যে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি, নারী প্রতিনিধিত্বের হার বৃদ্ধি, নির্বাচন পদ্ধতি এবং প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকা নিষিদ্ধ করার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো রয়েছে। 

নারী আসন বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, ধাপে ধাপে ১০০ আসনে উন্নীত করা হবে এবং প্রতিটি নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো নারী প্রার্থীর হার ৫ শতাংশ করে বাড়াবে, যা সংবিধানেও অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তবে, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের উচ্চকক্ষের নির্বাচন পদ্ধতি, রাষ্ট্রপতির সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব, রাষ্ট্রের মূলনীতি, মৌলিক অধিকার এবং কিছু সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পদ্ধতি নিয়ে এখনও মতভেদ রয়ে গেছে। 

বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর মতো দলগুলো এসব বিষয়ে তাদের আপত্তি জানিয়েছে। বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়েও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে; কিছু দল আইনি ভিত্তির ওপর জোর দিচ্ছে, অন্যথায় সনদের বাস্তবতা থাকবে না বলে মনে করছে। যদিও কমিশন আজ একটি সমন্বিত খসড়া প্রস্তুত করতে আশাবাদী, কিছু দল তাদের হতাশা প্রকাশ করেছে, কারণ তারা চায় যে বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়েও আলোচনা দ্রুত শেষ হোক।


দ্য ডেইলি স্টার: 'Deal reached on women's JS seats' (জাতীয় সংসদে নারী আসন নিয়ে চুক্তি সাক্ষর)

জুলাই সনদ চূড়ান্ত করার সময়সীমা শেষ হলেও, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখনও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, প্রধান উপদেষ্টার নিয়োগ পদ্ধতি, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের কাঠামো, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা এবং রাষ্ট্রনীতির মৌলিক নীতিমালা—এসব বিষয় নিয়ে এখনও বড় বিতর্ক চলছে। 

তবে, একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব নিয়ে। রাজনৈতিক দলগুলো সম্মত হয়েছে যে, আসন্ন নির্বাচনে কমপক্ষে পাঁচ শতাংশ আসনে নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হবে এবং সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা ৫০টি থাকবে। ভবিষ্যতে এই সংখ্যা ধাপে ধাপে ১০০-তে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে এবং ২০৪৩ সালের মধ্যে যদি সরাসরি নারী প্রতিনিধিত্ব ৩৩ শতাংশ নিশ্চিত করা যায়, তাহলে সংরক্ষিত আসনগুলো তুলে দেওয়া হবে। 

রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ানো, গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ এবং নতুন নীতির খসড়া দলগুলোকে সরবরাহ করা হয়েছে। অনেকেই চান এই সনদের বাস্তবায়ন দ্রুত হোক এবং এর একটি আইনি ভিত্তি থাকুক, অন্যথায় এটি অকার্যকর হয়ে যেতে পারে। বিএনপি, জামায়াত এবং অন্যান্য দল বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছে, কেউ আইনি কাঠামো, কেউ গণভোটের কথা বলেছে। তবে, অনেকেই দীর্ঘমেয়াদী বাস্তবায়ন পদ্ধতির বিরোধিতা করছেন। সব দলই চায় এই সনদ যেন বিশ্বাসযোগ্য, বাধ্যতামূলক এবং জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হয়।


নয়া দিগন্ত: '২০ শতাংশে নামছে শুল্ক'

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কনীতিতে বাংলাদেশের রপ্তানি খাত মারাত্মক চাপে পড়লেও, একটি ইতিবাচক খবর আসছে যে, শুল্ক হার ৩৫ শতাংশ থেকে কমে ১৫ থেকে ২০ শতাংশে নেমে আসতে পারে। যদি এটি হয়, তাহলে অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য এটি একটি বড় কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হবে। গত ৮ই জুলাই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন, যা ১লা আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। 

এই ঘোষণার ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, চামড়া এবং হস্তশিল্প খাতগুলো বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়েছিল। তবে, বাংলাদেশ সরকার ২৩শে জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে একটি বিস্তারিত অবস্থানপত্র পাঠায় এবং ২৯শে জুলাই থেকে ওয়াশিংটনে উচ্চপর্যায়ের তিন দিনের আলোচনা শুরু হয়। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে শুল্ক হ্রাস এবং বাণিজ্য ভারসাম্য নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা করেছে। 

বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে শুল্ক হ্রাসের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ভিয়েতনামের উদাহরণ টেনে যুক্তি দিয়েছে, যেখানে ভিয়েতনামের বাণিজ্য ঘাটতি ১২৩ বিলিয়ন ডলার, সেখানে বাংলাদেশের মাত্র ছয় বিলিয়ন। এছাড়া, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম, ডাল এবং এলএনজি আমদানির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই শুল্ক সমঝোতা যদি চূড়ান্ত হয়, তাহলে এটি কেবল অর্থনৈতিক নয়, রাজনৈতিকভাবেও সরকারের জন্য একটি বড় অর্জন হবে, যা ভবিষ্যতের কূটনৈতিক শক্তিকে আরও বাড়িয়ে দেবে।


বণিক বার্তা: 'শিক্ষার মানে গুরুত্ব কম দিয়ে আওয়ামী সরকারের মতো ভবন নির্মাণে বড় প্রকল্প'

গত এক দশকের বেশি সময় ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক উন্নতির চেয়ে রাজনীতি, ব্যবসা এবং প্রশাসনিক পদে নিজেদের নিয়োজিত রাখাই শিক্ষকদের প্রধান লক্ষ্য হয়ে উঠেছে, যার ফলে শিক্ষা ও গবেষণার মান উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এর প্রমাণ পাওয়া যায় আন্তর্জাতিক র‍্যাংকিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রমাগত পিছিয়ে পড়া দেখে। সম্প্রতি সরকার 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিকতর উন্নয়ন' নামে প্রায় দুই হাজার ৮৪০ কোটি টাকার একটি বিশাল প্রকল্প অনুমোদন করেছে, যার মূল ফোকাস নতুন ভবন নির্মাণে। 

এই প্রকল্পের অধীনে ৪১টি বহুতল ভবন, আবাসিক হল এবং শিক্ষক-কর্মচারীদের বাসস্থান নির্মাণের কথা রয়েছে। কিন্তু এই বিশাল বাজেটের মধ্যে শিক্ষার মানোন্নয়নে গবেষণা বা আধুনিক পাঠদান পদ্ধতির উন্নয়নের জন্য তেমন কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। বাজেটের মাত্র ২.০৮ শতাংশ গবেষণার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা শিক্ষাবিদদের মতে খুবই অপ্রতুল। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরাও মনে করেন যে, ভবন নির্মাণ নয়, বরং গবেষণা এবং আধুনিক পাঠদান পদ্ধতির ওপর জোর দেওয়া উচিত ছিল। কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, নতুন প্রকল্পের কাজ শুরু হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ আরও ব্যাহত হতে পারে। 

যদিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যুক্তি দিচ্ছে যে, অবকাঠামোগত উন্নয়ন সময়ের দাবি ছিল এবং এটি শিক্ষার পরিবেশকে সহায়তা করবে, তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধুমাত্র সুন্দর ভবন তৈরি করলেই শিক্ষার মান বাড়ে না – এর জন্য প্রয়োজন গবেষণা, গুণগত শিক্ষকতা এবং সুচিন্তিত একাডেমিক পরিকল্পনার বাস্তবায়ন।


সমকাল: 'রাউজানে দ্বন্দ্ব, খুনের পেছনে মাটির ব্যবসা বালুমহাল দখল, চাঁদা'

চট্টগ্রামের রাউজানে গত ১১ মাসে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, বালু-মাটি ব্যবসা এবং চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে অন্তত ১৫টি হত্যাকাণ্ড এবং প্রায় অর্ধশত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, যা এই অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি নির্দেশ করে। এই সহিংসতার মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে দুই বিএনপি নেতা গিয়াস কাদের চৌধুরী ও গোলাম আকবর খোন্দকারের মধ্যকার আধিপত্যের লড়াই। উভয় পক্ষই ইটভাটা এবং মাটি-বালুর ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে নিতে সহিংস পথ অবলম্বন করছে। কর্ণফুলী ও হালদা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে অসংখ্য সংঘর্ষের হটস্পট তৈরি হয়েছে। 

রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা কিছু চক্র এলাকায় খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজি এবং সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে। দুঃখজনকভাবে, অনেক আওয়ামী লীগপন্থি নেতা এখন বিএনপিতে যোগ দিয়ে তাদের পুরোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছেন। স্থানীয় ইউএনও এবং পুলিশের ভাষ্যমতে, নেতারা তাদের কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। হত্যা ও অপহরণের ঘটনার পেছনে দলীয় পরিচয়ে বারবার প্রশ্রয় এবং বিচারহীনতা বড় ভূমিকা রাখছে। 

এলাকার জনগণ চরম আতঙ্কে আছে, এবং প্রশাসন বারবার সংঘর্ষ থামাতে ব্যর্থ হচ্ছে। যদিও বিএনপির জেলা কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তাতেও সহিংসতা কমেনি। বালুমহাল ও মাটি ব্যবসার আধিপত্য ঘিরে সংঘর্ষ, খুন, চাঁদাবাজি এবং অপরাধ এখন রাউজানের রাজনৈতিক বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে। শান্তি ফিরিয়ে আনতে কেবল প্রশাসনিক পদক্ষেপই যথেষ্ট নয়, দলীয় নেতাদের আন্তরিকতা ও জবাবদিহিতা অত্যাবশ্যক।


দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড: 'Salman F Rahman, Shibli Rubayat banned from market for life' (সালমান এফ রহমান, শিবলী রুবাইয়াতকে আজীবনের জন্য পুঁজিবাজারে নিষিদ্ধ ঘোষণা)

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) 'আমার বন্ড' এবং 'গ্রিন সুকুক' নিয়ে ভয়াবহ জালিয়াতির অভিযোগে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, তার ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান এবং সাবেক বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে আজীবনের জন্য পুঁজিবাজার থেকে নিষিদ্ধ করেছে। 

২০২৩ সালে 'আইএফআইসি আমার বন্ড' নামে এক হাজার কোটি টাকা তোলার সময় বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করে প্রতারণা করা হয়। প্রকৃত ইস্যুকারী ছিল বেক্সিমকোর সহযোগী শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেড, কিন্তু আইএফআইসি ব্যাংকের নাম ব্যবহার করে বিনিয়োগকারীদের ভুল ধারণা দেওয়া হয়েছিল। একই ধরনের অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহার ধরা পড়েছে ২০২১ সালে তিন হাজার কোটি টাকার গ্রিন সুকুক অনুমোদনে। এই অর্থ দুটি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং টেক্সটাইল সম্প্রসারণে ব্যবহারের কথা থাকলেও, বর্তমানে কেবল তিস্তা সৌর প্রকল্পটি চালু আছে। 

বাকি প্রকল্পগুলো থেমে গেছে এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিক সংকটে ভুগছে। সরকার পরিবর্তনের পর সালমান এফ রহমান গ্রেপ্তার হয়েছেন, তার ছেলে পলাতক, আর শিবলী রুবাইয়াত বর্তমানে দুর্নীতির মামলায় কারাগারে আছেন। বিএসইসি এটিকে তাদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কমিশনের নিজস্ব সাবেক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এমন কঠোর পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছে। তদন্তে প্রতারণা, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং বাজার থেকে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের দুর্নীতি উন্মোচিত হয়েছে।


যুগান্তর: 'একশ খেলাপির পকেটে ৩ পদ্মা সেতুর টাকা'

বাংলাদেশের আর্থিক খাত ভয়াবহ খেলাপি ঋণের শিকার, যা দেশের অর্থনীতিতে ক্যানসারের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। ২০২৪ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত মাত্র ১০০ জন ঋণখেলাপির কাছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পাওনা প্রায় এক লাখ আট হাজার কোটি টাকা, যা দিয়ে তিনটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যেত। এই খেলাপি ঋণের সবচেয়ে বড় অংশীদার হলো এস আলম এবং বেক্সিমকো গ্রুপ। 

এদের নামে-বেনামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে, যার বড় অংশই আর ফেরত আসছে না। বেক্সিমকোর ২৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৬টিই শতভাগ খেলাপি, এবং এস আলম গ্রুপের ১০টি প্রতিষ্ঠানেও হাজার হাজার কোটি টাকা কুঋণ হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এসব ঋণ অনেক সময় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে এবং অপর্যাপ্ত জামানত ছাড়াই দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ব্যাংক খাতে মোট ঋণের ২৫ শতাংশের বেশি এখন খেলাপি। 

যদি আদালতের স্থগিতাদেশ এবং নন-ফান্ডেড ঋণগুলোও ধরা হয়, তাহলে এই অঙ্ক আরও অনেক বেশি হবে। বহু বড় ব্যবসায়ী এবং রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তি এই ঋণ নিয়ে ফেরত না দিয়ে কালো টাকা ও ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন। অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে বলেছেন যে, এই অবস্থা চলতে থাকলে দেশের ব্যাংক ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে এসব ঋণখেলাপির জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা অপরিহার্য।



আমারদেশ: 'পলাতক শেখ পরিবারের সদস্যরা কে কোথায়?'

জুলাই বিপ্লবের এক বছর পর শেখ পরিবারের সদস্যরা কোথায় আছেন, তা এখন জনগণের মুখে মুখে ঘুরছে। গত দেড় দশক ধরে বাংলাদেশের ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা এই পরিবারের বিরুদ্ধে মেগা প্রকল্প, টেন্ডার বাণিজ্য, ক্যাসিনো নিয়ন্ত্রণ, নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য এবং দলীয় পদ দখলের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ার অভিযোগ রয়েছে।

৫ই আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা সামরিক বিমানে ভারতে পালিয়ে যান। শেখ হাসিনা বর্তমানে দিল্লিতে কঠোর নিরাপত্তায় আছেন, যদিও তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়। শেখ রেহানা ভারত হয়ে লন্ডনে ফিরে গেছেন। তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানিলন্ডারিংয়ের মামলা চলমান।

শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্রে আছেন, তবে সম্প্রতি তিনি ভারতে মায়ের সঙ্গে দেখা করে এসেছেন। তার বিরুদ্ধে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা ও দুর্নীতির অভিযোগ আছে। মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ডব্লিউএইচও থেকে ছুটিতে আছেন এবং তার বিরুদ্ধে অর্থ লোপাটের তদন্ত চলছে। শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও মেয়েরা (টিউলিপ সিদ্দিক ও আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী) যুক্তরাজ্যে আছেন।

এছাড়া, শেখ মুজিবের ছোট ভাই শেখ আবু নাসেরের পাঁচ ছেলে এবং শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই শেখ ফজলুল করিম সেলিমের পরিবার ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে। শেখ ফজলুল হক মণির দুই সন্তান শেখ ফজলে শামস পরশশেখ ফজলে নূর তাপস কানাডায় আছেন। ক্যাসিনোকাণ্ডে আলোচিত শেখ ফজলুর রহমান মারুফ দুবাইয়ে এবং ওমর ফারুক চৌধুরী আত্মগোপনে আছেন। আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর পরিবারের অবস্থান অস্পষ্ট, তবে তার ছেলে গ্রেপ্তার হয়েছেন। শেখ হাসিনার ফুফাতো বোন শেখ ফাতেমা বেগমের দুই ছেলে নূর-ই আলম চৌধুরীমুজিবুর রহমান চৌধুরী বর্তমানে ভারতে আছেন। উল্লেখ্য, জুলাই বিপ্লবের পর সশস্ত্র বাহিনীর কাছে আশ্রয় নেওয়া ৬২৬ জনের তালিকায় শেখ পরিবারের কোনো সদস্যের নাম নেই।

Post a Comment

Previous Post Next Post