আজ ৫ আগষ্ট ২০২৫ সংবাদপত্রের প্রধান শিরোনামের সারাংশ


সমকাল: রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে 'কর্তৃত্ববাদী সরকার' ক্ষমতাচ্যুত হলেও বিভিন্ন খাতে দলীয়করণের ধারাবাহিকতা এখনও অব্যাহত রয়েছে। সংস্থাটি সতর্ক করে দিয়েছে যে, যেভাবে কয়েকটি দলের চাপে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তাতে ভবিষ্যতে প্রতিপক্ষকে দমনের এক নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

টিআইবি'র মতে, গত এক বছরে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বিচার, প্রশাসনসহ গুরুত্বপূর্ণ খাতে কিছু ঘাটতি রয়ে গেছে, যা দুর্নীতিমুক্ত ও জবাবদিহিতামূলক সরকার গঠনের প্রত্যাশাকে পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। 'জুলাই সনদ'-এর সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য এবং এর আইনি বাস্তবায়নের অনিশ্চয়তার কারণে সংস্কারের আশা ধাক্কা খেতে পারে, যা রাজনৈতিক সংকট আরও ঘনীভূত হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি করবে।


কালের কণ্ঠ: ভোট ১২ ফেব্রুয়ারি!

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ, ৫ই আগস্ট, জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ঘোষণা করতে পারেন। গণ-আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের বর্ষপূর্তিতে তিনি এই ঘোষণা দেবেন।

একই দিনে বিকেল ৫টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় তিনি 'জুলাই ঘোষণাপত্র' পাঠ করবেন। একাধিক সরকারি সূত্র জানিয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ইঙ্গিত দিতে পারেন এবং পরে নির্বাচন কমিশন নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করবে।

নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যেই জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানে কোনো সমস্যা হবে না এবং আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে।


যুগান্তর: শেখ হাসিনার নির্দেশ ছিল 'নো রিলিজ নো ট্রিটমেন্ট'

জুলাই অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার দ্বিতীয় সাক্ষী হিসেবে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল ইমরান জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি জানান, আন্দোলনে পায়ে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর হাসপাতালে শেখ হাসিনা তাদের দেখতে এসে কর্মীদের 'নো রিলিজ, নো ট্রিটমেন্ট' (ছাড়পত্র নয়, চিকিৎসা নয়) নির্দেশ দেন।

হুইলচেয়ারে করে ট্রাইব্যুনালের সামনে এসে তিনি তার দুর্ভোগের বর্ণনা দেন। একই দিন তৃতীয় সাক্ষী হিসেবে পুলিশের গুলিতে চোখ হারানো পারভীন বলেন, 'শেখ হাসিনার কারণে আমার চোখ হারিয়েছি। সবকিছুর জন্য শেখ হাসিনা দায়ী।' এই সাক্ষ্যগুলো জুলাই অভ্যুত্থানের সময়কার সরকারি বাহিনীর দমন-পীড়নের চিত্র তুলে ধরেছে।


প্রথম আলো: পতনের আগের রাতেও দমনের চেষ্টায় ছিলেন শেখ হাসিনা

সরকার পতনের আগের রাতেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলন দমনের চেষ্টায় অনড় ছিলেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থা এবং বিভিন্ন বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা তাকে জানিয়েছিলেন যে, ৫ই আগস্ট লাখ লাখ মানুষ রাজপথে নামতে পারে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। তা সত্ত্বেও শেখ হাসিনা আরও রক্তপাত ঘটিয়ে হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বাহিনীগুলোকে চাপ দেন।

তিনি ক্ষমতা ধরে রাখতে এতটাই বদ্ধপরিকর ছিলেন যে, দেশ ছেড়ে পালানোর আগের রাতেও আন্দোলন দমনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য পাওয়া গেছে, যা শেখ হাসিনার শেষ মুহূর্তের মনোভাব ও পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করে।


মানবজমিন: এক বছরেও হাসপাতাল ছাড়তে পারেননি তারা

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত অনেকে এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এক বছর পরেও জাবেদ ইকবালের মতো অনেকে রাজধানীর বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ, পিজি হাসপাতাল, নিটোর এবং সিএমএইচ-এর বেডে পড়ে আছেন।

কেউ হাঁটতে পারেন না, কেউ কথা বলতে পারেন না, আবার কেউ দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। 'জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন'-এর তথ্য অনুযায়ী, এই আন্দোলনে ১৪,৫৪১ জন আহত এবং ৮৫২ জন শহীদ হয়েছেন। এক বছর পরেও অনেক গুরুতর আহত ব্যক্তি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাননি, যা তাদের শারীরিক ও মানসিক দুর্ভোগের করুণ চিত্র তুলে ধরে।


নয়া দিগন্ত: অনৈক্যের সুবিধা নিতে তৎপর ফ্যাসিবাদীগোষ্ঠী

গত বছরের ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে দীর্ঘ ১৫ বছরের 'স্বৈরশাসন'-এর অবসান হয় এবং শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। দিনটিকে 'জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস' হিসেবে পালন করা হচ্ছে। এই উপলক্ষে আজ বিকেলে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় 'জুলাই ঘোষণাপত্র' পাঠ করবেন।

তবে, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পর 'ফ্যাসিবাদ বিরোধীদের' মধ্যে অনৈক্যের সুর স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, যা 'ফ্যাসিবাদীগোষ্ঠী'কে তাদের সুবিধা নেওয়ার সুযোগ করে দিতে পারে। এই বিভেদ নতুন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে।


ইত্তেফাক: মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় আসতে পারে ডিসেম্বরের মধ্যে

জুলাই আন্দোলনে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনা, তার সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা ও আমলাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার প্রক্রিয়া চলছে। ইতিমধ্যেই শেখ হাসিনার মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে এবং ডিসেম্বরের মধ্যে বেশ কয়েকটি মামলার রায় আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রসিকিউশন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা শেখ হাসিনার নির্দেশে আন্দোলন দমনে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে। এর ফলে বিপুল সংখ্যক মানুষের হতাহতের ঘটনা ঘটেছিল।


নিউ এজ: বিনিয়োগে ধীরগতি, বেকারত্ব বাড়ছেই

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের এক বছর পর কিছু সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম হলেও, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের ধীরগতি এবং বেকারত্ব নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংকে লুটপাট, দুর্নীতি এবং অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার কারণে দেশের অর্থনীতি তলানিতে নেমে গিয়েছিল।

অন্তর্বর্তী সরকার রেকর্ড পরিমাণ ৩.৬ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা নিশ্চিত করে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার চেষ্টা করেছে, যা অর্থনীতিবিদদের প্রশংসা পেয়েছে। তবে, বেসরকারি খাতের মন্দা এবং ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব এখনো একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে, যা সরকারের জন্য একটি বড় মাথাব্যথার কারণ।


দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড: বন ধ্বংস করে গড়ে উঠছে কারখানা, মিরসরাইয়ের আশঙ্কাজনক বাস্তবতা

চট্টগ্রামের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল, যা এখন জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এনএসইজেড) নামে পরিচিত, সেখানে বন ধ্বংস করে কারখানা গড়ে তোলার এক ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। ২২,৩৩৫ একর সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্যে প্রায় ৫.৫ কোটিরও বেশি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।

এর মধ্যে ৮৫৩ একর উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ বনও ধ্বংস করা হয়েছে। যদিও এই অঞ্চলে ১৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে, এর পরিবেশগত ক্ষতি বিপুল। প্রাকৃতিক আবাসস্থল হারানোর কারণে ৫,০০০ চিত্রা হরিণসহ অসংখ্য প্রাণী হয় মারা গেছে অথবা এলাকা ছেড়ে চলে গেছে।

১৯৫৭ সালে গড়ে ওঠা এই সবুজ বেষ্টনী একসময় ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে ৫ লাখেরও বেশি উপকূলবাসীকে সুরক্ষা দিত, কিন্তু এখন তা ধ্বংসের মুখে।


হ্যাসটেগ :  #গণঅভ্যুত্থান #জুলাইবিপ্লব #শেখহাসিনা #মুহাম্মদইউনুস #বাংলাদেশ

Post a Comment

Previous Post Next Post