সংবাদ বিশ্লেষণ: ১৩ আগষ্ট ২০২৫ বাংলাদেশের প্রধান দৈনিক পত্রিকাগুলোর শিরোনাম ও সংক্ষিপ্ত সংবাদ

 

১. বণিক বার্তা: যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানির কাছ থেকে চীনে তৈরি জাহাজ কিনবে সরকার

বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্রের হেলেনিক ড্রাই বাল্ক ভেঞ্চারস এলএলসি থেকে ৯৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ কিনছে। যদিও সরবরাহকারী কোম্পানিটি যুক্তরাষ্ট্রের, জাহাজ দুটি তৈরি হচ্ছে চীনে। 

নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি) এই জাহাজ দুটি পরিচালনা করবে, যা তাদের বহরে যুক্ত হবে। বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মাহমুদুল মালেক এটিকে একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। 

তিনি দাবি করেন, সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বচ্ছ এবং এই অর্থ বিএসসির নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। এই পদক্ষেপ দেশের সামুদ্রিক বাণিজ্য ও পরিবহন ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

২. দৈনিক ইত্তেফাক: যুক্তরাষ্ট্র থেকে দুটি বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ ক্রয়

সরকার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হেলেনিক ড্রাই বাল্ক ভেঞ্চারস এলএলসি থেকে দুটি বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৯৩৫ কোটি টাকা। সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি (সিপিপিএ) এই ক্রয় প্রস্তাবটি অনুমোদন দিয়েছে। 

এই জাহাজগুলো বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএসসি) বহরে যুক্ত হলে দেশের সামুদ্রিক পরিবহন খাত আরও শক্তিশালী হবে। এই উদ্যোগকে দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রসারে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

৩. যুগান্তর: বাংলাদেশে নজরদারি প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা টেকগ্লোবাল ইনস্টিটিউটের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত দশ বছরে বাংলাদেশে নজরদারি প্রযুক্তি ও স্পাইওয়্যারের ব্যবহার ব্যাপক হারে বেড়েছে। 

২০১৫ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে প্রায় ২৩০০ কোটি টাকার নজরদারি সরঞ্জাম কেনা হয়েছে, যার মধ্যে ইসরায়েলি উৎস থেকে আনা হয়েছে ৫২৭ কোটি টাকার সরঞ্জাম। প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে, সন্ত্রাস দমনের নামে এই প্রযুক্তি বিরোধী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক এবং মানবাধিকার কর্মীদের ওপর নজরদারির জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে, যা ব্যক্তি স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকারের জন্য হুমকি।

৪. নিউ এইজ: জুলাই শহীদদের পরিবারগুলোর জন্য অসামঞ্জস্যপূর্ণ সুবিধা

২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবারগুলোর মধ্যে রাষ্ট্রীয় সুবিধা বিতরণে ব্যাপক অসামঞ্জস্য দেখা যাচ্ছে। কিছু পরিবার এককালীন ৩০ লক্ষ টাকা সহায়তা পেলেও, অন্য কিছু পরিবার পেয়েছে মাত্র ৬-৭ লক্ষ টাকা। 

এমনকি কিছু পরিবার এখনো কোনো আর্থিক সহায়তা পায়নি। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী সুবিধা বিতরণের কথা বললেও, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো সমান সুবিধা পাওয়ার দাবি জানিয়েছে। এই বৈষম্য নিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।

৫. নয়া দিগন্ত: মিয়ানমারের আরাকান আর্মিতে ভাঙন

মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে ভাঙন দেখা দিয়েছে। কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী এলাকায় বেশ কিছু বিদ্রোহী সদস্য বাংলাদেশে আত্মসমর্পণের অপেক্ষায় রয়েছে। 

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, দলের মধ্যে মাদক ও লুটপাট নিয়ে বিরোধ, নতুন সদস্যদের অনভিজ্ঞতা এবং যুদ্ধের অনিশ্চয়তা এই ভাঙনের প্রধান কারণ। 

এই পরিস্থিতি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের গভীরতা প্রকাশ করে এবং একইসাথে বাংলাদেশের সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।

৬. কালের কণ্ঠ: গত এক বছরে ৩৫৩ কারখানা বন্ধ, লক্ষাধিক শ্রমিক বেকার

গত এক বছরে সাভার, গাজীপুর, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে ৩৫৩টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে ১ লক্ষ ১৯ হাজার শ্রমিক তাদের চাকরি হারিয়েছেন। 

কারখানা বন্ধের মূল কারণ হিসেবে শ্রমিক অসন্তোষ, উচ্চ ব্যাংক ঋণ সুদ, গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকট এবং উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। 

এই ঘটনা দেশের শিল্প খাতের দুর্বলতা এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেছে, যা বেকারত্ব বাড়াতে এবং সামগ্রিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

৭. প্রথম আলো: বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া সম্পর্ক গভীর করার প্রত্যয়

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি মালয়েশিয়া সফরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এই সফরে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা হয়। 

বিশেষ করে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জনশক্তি রপ্তানি এবং রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এই আলোচনা দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

৮. সমকাল: নিজ দলের প্রতীকে ভোটের প্রস্তাবে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের প্রতীকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই প্রস্তাবের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। 

বিএনপি এই প্রস্তাবে আপত্তি না জানালেও, জামায়াতে ইসলামী এবং ছোট দলগুলোর মধ্যে মতভেদ রয়েছে। নির্বাচন কমিশন মনে করে, এই নিয়ম স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে, কিন্তু ছোট দলগুলো মনে করে এটি তাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে।

৯. দ্য ডেইলি স্টার: বিমানের নষ্ট বিমানে ফ্লাইট সিডিউল বিপর্যস্ত

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে থাকা বেশ কয়েকটি বিমান কারিগরি ত্রুটির কারণে গ্রাউন্ডেড থাকায় ফ্লাইট সিডিউল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। 

ঢাকা-কুয়েত ও ঢাকা-দুবাইসহ বিভিন্ন রুটে ফ্লাইট বিলম্বিত হচ্ছে, যার ফলে যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ছে। এই সমস্যা বিমানের যাত্রীসেবার মান নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে এবং রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা প্রকাশ করছে।

১০. আমাদেরসময়: ব্যাংক খাত সংস্কারের এক বছর: অনিয়ম থামলেও ফেরেনি লোপাটের টাকা

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ব্যাংক খাতে কিছু সংস্কার আনলেও, লুটেরা ও অনিয়মের মূল কাঠামো ভাঙা সম্ভব হয়নি। গত এক বছরে ১৪টি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হলেও, লোপাট হওয়া অর্থ ফেরত আসেনি। 

খেলাপি ঋণ এখনও নিয়ন্ত্রণহীন, যা অর্থনীতির জন্য বড় হুমকি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য কঠোর তদন্ত ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি। 

এখনও দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূতকরণের প্রক্রিয়া চলছে, যা ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পারে।

১১. বাংলাদেশ প্রতিদিন: নির্বাচন ঠেকাতে নানা ষড়যন্ত্র: বিশ্লেষণ

প্রধান উপদেষ্টা ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিলেও, একটি মহল নাকি এই নির্বাচন বানচালের জন্য নানা ষড়যন্ত্র করছে। বিএনপি, জাতীয় পার্টি (জাফর) এবং অন্যান্য রাজনৈতিক মহল অভিযোগ করেছে যে, একটি গোষ্ঠী ইস্যু তৈরি করে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছে যাতে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া যায়। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক ক্যাম্পাস অশান্তি এবং সহিংসতা এই ষড়যন্ত্রেরই অংশ হতে পারে। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের ডিসেম্বরে তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি থাকলেও, রাজনৈতিক সংঘাতের আশঙ্কা নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

১২. মানবজমিন: ধুঁকছে বিমান, এক মাসে ত্রুটির কবলে ৯ উড়োজাহাজ

রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজে যান্ত্রিক ত্রুটির ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। গত এক মাসে ১৫টি বিমানে বিভিন্ন ধরনের ত্রুটি ধরা পড়ায় ফ্লাইট বাতিল ও বিলম্বে যাত্রীদের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। 

রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলা, পুরোনো যন্ত্রাংশ ব্যবহার এবং অভিজ্ঞ প্রকৌশলীর অভাবকে এই সমস্যার মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, এই অবস্থা চলতে থাকলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়বে। 

বিমান কর্তৃপক্ষের উচিত জরুরি ভিত্তিতে একটি পূর্ণাঙ্গ টেকনিক্যাল অডিট করে রক্ষণাবেক্ষণ প্রক্রিয়া শক্তিশালী করা।

ট্যাগ: বাংলাদেশ সংবাদ, সরকারি ক্রয়, নজরদারি প্রযুক্তি, শ্রমিক বেকারত্ব, আরাকান আর্মি, বিমান বাংলাদেশ


Post a Comment

Previous Post Next Post