📰 আজকের (৮ আগষ্ট ২০২৫) সংবাদপত্রের প্রধান খবর সংক্ষেপ

📰 প্রধান খবর সংক্ষেপ

১. যুগান্তর — ‘অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর: প্রত্যাশা-প্রাপ্তির বিস্তর ফারাক’

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ২০২৪ সালের আগস্টে ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রশাসনিক ভঙ্গুরতা ও অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় তারা কিছু অগ্রগতি অর্জন করেছে। নির্বাচনি সময়সূচি ঘোষণা, বিচার কার্যক্রমে গতি, গণতান্ত্রিক সংস্কার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ শনাক্তকরণ উল্লেখযোগ্য সাফল্য। অর্থনীতিতে কিছুটা স্থিতিশীলতা ও মূল্যস্ফীতি কমানোও ইতিবাচক। 

তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি, কিশোর গ্যাং, চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতন ও ছিনতাই অব্যাহত। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে উন্নতি হয়নি, বরং বেকারত্ব বেড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দলীয়করণের ধারা শুধু নেতৃত্ব পরিবর্তনে সীমাবদ্ধ। টিআইবি বলছে, বিচার ও নির্বাচনি প্রস্তুতিতে অগ্রগতি থাকলেও সুশাসন, স্বচ্ছতা ও আইনের শাসনে ঘাটতি রয়ে গেছে। 

প্রশাসনে সমন্বয়হীনতা ও সিদ্ধান্তহীনতা সমস্যা জটিল করেছে।

২. প্রথম আলো — ‘৯০ দিনের ৩৬ দিনই রাস্তা আটকা’

গত ৯ মে থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকার সড়ক অন্তত ৩৬ দিন অবরোধ হয়েছে, মোট ৫৪ বার। এর মধ্যে ২৬ বার রাজনৈতিক কর্মসূচি, ১৩ বার শিক্ষার্থী আন্দোলন, ৬ বার চাকরি-সংক্রান্ত দাবি এবং ৯ বার অন্যান্য কারণে। শাহবাগ এলাকায় সবচেয়ে বেশি অবরোধ হয়েছে, যা গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোর কার্যক্রম ব্যাহত করেছে। 

এসব অবরোধে যানজট শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে, রোগী ও সাধারণ মানুষ মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়ে। চিকিৎসকরা বলছেন, শব্দদূষণে রোগীদের অবস্থা খারাপ হয়। ঢাকায় রাস্তার পরিমাণ মাত্র ৯ শতাংশ, যেখানে দরকার অন্তত ২৫ শতাংশ, ফলে যানজট ভয়াবহ। বিশেষজ্ঞরা গণপরিবহন বাড়ানো, প্রাইভেট গাড়ি নিয়ন্ত্রণ এবং সমন্বিত পরিকল্পনার ওপর জোর দিচ্ছেন। 

অনেকে মনে করেন, সভা-সমাবেশ মাঠ বা খোলা স্থানে হওয়া উচিত, বিশেষত ছুটির দিনে, এবং সরকারকে অযথা রাস্তা অবরোধে কঠোর হতে হবে।

৩. নয়া দিগন্ত — ‘সাফল্য স্থিতিশীলতা ও বিচারে ব্যর্থতা, সংস্কারে অনিশ্চয়তা’

গণ-অভ্যুত্থানের পর নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক সংকট নিরসন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সংস্কারের লক্ষ্যে দায়িত্ব নেয়। গত এক বছরে সহিংসতা কমেছে, রাজনৈতিক সহাবস্থানের পরিবেশ তৈরি হয়েছে, খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি অর্ধেকে নেমেছে, রফতানি ও রেমিট্যান্সে রেকর্ড হয়েছে, টাকার মান ও রিজার্ভ শক্তিশালী হয়েছে। 

বিদেশি বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে উন্নতি হয়েছে, বড় প্রকল্পে কর্মসংস্থানের ঘোষণা এসেছে। তবে সাংবিধানিক সংস্কারের সুপারিশ বাস্তবায়ন শুরু হয়নি। মানবাধিকার ও কিছু মামলার স্বচ্ছতা নিয়ে সমালোচনা আছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও জলবায়ু অভিযোজনে পদক্ষেপ নেওয়া হলেও রাজনৈতিক আস্থার সংকট কাটেনি। 

বিরোধী দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন এখন বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন, মৌলিক অধিকার সুরক্ষা ও সংলাপের উদ্যোগ এখন জরুরি।

৪. আজকের পত্রিকা — ‘বছরজুড়ে মব-আতঙ্ক’

অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরেও আইনশৃঙ্খলায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি। ৫ আগস্টের সহিংসতার পর পুলিশের মনোবল ভেঙে পড়ে, যা এখনও পুরোপুরি ফেরেনি। এই সুযোগে অপরাধীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। গত ছয় মাসে ১৪১টি মব হামলায় ৮৩ জন নিহত হয়েছেন। 

পুরান ঢাকার সোহাগ হত্যা, কুমিল্লায় মা-সন্তান হত্যার মতো নৃশংস ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। বিভিন্ন জেলায় শিক্ষক লাঞ্ছনা, দখল-বাণিজ্য ও প্রশাসনে জোরপূর্বক বদল ঘটেছে। ভুক্তভোগীরা মামলা করতেও ভয় পাচ্ছেন। 

পুলিশ বলছে পরিস্থিতি উন্নতি করছে, কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন বাহিনী দুর্বল এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত কার্যকর কৌশল না থাকায় অপরাধ দমন সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, অবস্থা চলতে থাকলে সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে।

৫. ঢাকা ট্রিবিউন — ‘ইউনূস: সরকারের দ্বিতীয় ধাপ শুরু, লক্ষ্য সুষ্ঠু নির্বাচন’

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দ্বিতীয় ধাপ শুরু হয়েছে, মূল লক্ষ্য একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচন কমিশনকে রমজানের আগে ফেব্রুয়ারিতে ভোট আয়োজনের অনুরোধ করা হয়েছে। 

সংস্কার ও বিচার কার্যক্রম একসাথে চলবে, সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে অগ্রগতি শিগগির জানানো হবে। যুদ্ধাপরাধের ৪টি মামলার বিচার চলছে, ২৭টি তদন্তাধীন। নির্বাচনের জন্য প্রায় ৮ লাখ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন হবে, সেনাবাহিনী ৬০ হাজার সদস্য দেবে। 

এ পর্যন্ত সরকারের ৩১৫টি সিদ্ধান্তের ৭৮% বাস্তবায়িত হয়েছে। প্রশাসন ও অর্থনীতিকে স্থিতিশীল দাবি করে সরকার নির্বাচনি প্রস্তুতি জোরদার করছে।

৬. নিউ এইজ — ‘ডিসেম্বরের শুরুতে নির্বাচনের তফসিল’

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সূচি ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ঘোষণা হতে পারে। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি রমজানের আগে ভোট আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। 

এ বছর ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত যাদের বয়স ১৮ হবে, তারা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবেন। প্রবাসী বাংলাদেশিরা ডাকযোগে ভোট দিতে পারবেন, সেপ্টেম্বরে অনলাইন নিবন্ধন শুরু হবে। সরকারি কর্মচারী, ভোটের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি ও আটক ব্যক্তিরাও ডাক ভোটের আওতায় আসতে পারেন। 

ভুয়া তথ্য ও বিভ্রান্তি রোধে বিশেষ কমিটি গঠন হবে। ড্রোন ব্যবহার নির্বাচনী প্রচারণায় নিষিদ্ধ হবে।

৭. কালের কণ্ঠ — ‘আসনপ্রতি তিন প্রার্থী প্রস্তুত বিএনপির’

বিএনপি আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রতিটি আসনে গড়ে তিনজন করে প্রার্থী প্রস্তুত রেখেছে। প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা, সততা, সামাজিক কর্মকাণ্ড ও দলীয় আনুগত্য যাচাই হচ্ছে। একাধিক জরিপে নেতাদের অতীত কর্মকাণ্ড বিবেচনায় আনা হচ্ছে। চাঁদাবাজি বা দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ থাকলে বাদ পড়ছেন। 

নভেম্বরের মধ্যে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হবে। প্রায় ৭০টি আসন জোটসঙ্গীদের দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা সক্রিয় হয়েছেন। 

বিএনপি মনে করছে, অবাধ নির্বাচন হলে তাদের জয়ের সম্ভাবনা বেশি।

৮. বণিক বার্তা — ‘সামষ্টিক অর্থনীতির নাজুকতা কাটলেও আস্থার ঘাটতি’

এক বছর আগে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় অর্থনীতি ছিল নাজুক—উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট, রিজার্ভের ঘাটতি, ব্যাংক খাতে নৈরাজ্য ছিল প্রবল। গত এক বছরে অনেক সূচকে উন্নতি হলেও বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়েনি, মূল্যস্ফীতি এখনও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নামেনি। 

দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা অপরিবর্তিত। বিশ্লেষকদের মতে, গণমানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী সাফল্য আসেনি, অনেক সংস্কার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়নি।

৯. মানবজমিন — ‘গাজীপুরে সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যা’

গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। তিনি চাঁদাবাজি নিয়ে ফেসবুক লাইভ করেছিলেন, যা হত্যার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। 

১০-১২ জন সন্ত্রাসী চাপাতি দিয়ে হামলা চালিয়ে ঘটনাস্থলেই তাকে হত্যা করে। এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।

 
টেগ : বাংলাদেশ সংবাদ, অন্তর্বর্তী সরকার, নির্বাচন ২০২৬, বিএনপি, অর্থনীতি, আইনশৃঙ্খলা, ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ঢাকা যানজট, মব ভায়োলেন্স, সাংবাদিক হত্যা

Post a Comment

Previous Post Next Post